ভ্রমণে বাচ্চার যত্ন

পরিবারের সাথে ছুটিকাটানো ! এইটুকু কথাই মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ । বাচ্চাদের সাথে বেড়াতে যাওয়া একদিকে যেমন আনন্দের এক অভিজ্ঞতা আবার অন্যদিকে বাচ্চাদের সাথে নিশ্চিন্তে সময় কাটানোরও এক সুযোগ। তবে, সদ্যজাতদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া বেশ কঠিন কাজ কারণ আপনাকে ভাবতে হবে যে প্রয়োজনীয় কোন, কোন জিনিসগুলো সঙ্গে নেবেন। একজন মা হিসেবে আপনার অনেকগুলো চিন্তা থাকবেই যেমন বাচ্চাকে খাওয়ানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সাবধানতা এবং ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা। আপনার ভয় অমূলক নয়।

সদ্যজাত বাচ্চাদের বেশি খেয়াল রাখার দরকার কারণ :-

১. রোগপ্রতিরোধ শক্তি পরিণত না হওয়ার কারণে তাদের চট করে অসুখ করতে পারে।

২. নরম ত্বক।

৩. অ্যালার্জির প্রবণতা।

৪. খাওয়ানোর সমস্যা। 

৫. ঘুমের ব্যাঘাত।

কিন্তু এইসব কারণে বেড়ানোর প্ল্যান না করার কিছু নেই। আজকের দিনে আমাদের সবারই একটু ছুটি এবং বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। আপনার সদ্যজাত শিশুর সাথেই বেড়াতে যান তবে যাবার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পড়ে নিন এবং শিশুর জন্য কী, কী নেওয়া দরকার তা মনে রাখুন।

খাওয়ানো : বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোই সবচেয়ে ভালো। মাতৃদুগ্ধ সেই খাবার যা সর্বদা শিশুকে দেওয়া সম্ভব, যাতে কোনো অ্যালার্জিক উপাদান নেই, যা বাচ্চার জন্য নিরাপদ এবং পৌষ্টিক গুণ সমৃদ্ধ। মাতৃদুগ্ধ পান করে না এমন শিশুদের জন্য আপনাকে অনেকগুলো স্টেরিলাইজ করা বোতল নিতে হবে বা ভ্রমণের দৈর্ঘ্য অনুসারে খাওয়ানোর অন্য ইকুইপমেন্ট সঙ্গে নিতে হবে। এর সাথেই ফর্মুলা ফুড, স্টেরিলাইজ করার সামগ্রী, বটল ওয়ারমার এবং বোতল পরিষ্কার করার ব্রাশ অবশ্যই সাথে নেবেন।

পোশাক:  আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া অনুযায়ী বাচ্চার জন্য পোশাক বাছুন। সঙ্গে নিন অনেকগুলো চেঞ্জ কারণ বাচ্চাদের বারেবারে পোশাক বদলে দিতে হয়। প্রতি ঘন্টায় একবার বদলানোর মতন যথেষ্ঠ সংখ্যক ন্যাপি রাখুন। এতে অ্যালার্জি, ইনফেকশন এবং ত্বকের সমস্যা কম হবে। সঙ্গে অবশ্যই নিন বিবস, ওয়াইপ এবং ডিসপোজেবল ব্যাগ যাতে প্রয়োজনে ন্যাপি ও অন্যান্য নোংরা বস্তু ফেলে দিতে পারেন।

ঘুম:  বেড়ানোর সময় বাচ্চাদের ঘুমের নিয়ম নষ্ট হয়ে যায়। সাথে রাখুন কানে ব্যথার ওষুধ, কলিক ব্যাথার ওষুধ, ছোটো খাটো অসুখ যেমন সর্দি বা জ্বরের ওষুধ। শিশু চিকিৎসকের সাথে কথা বলে বাচ্চার মেডিকেল কিট গুছিয়ে নিন।

পরিচ্ছন্নতা :  ভ্রমণের সময় যে কোনো মায়ের প্রথম চিন্তা হলো কিভাবে বাচ্চাকে ইনফেকশন থেকে বাঁচানো যায়। নিম্নোক্ত জিনিসগুলো মাথায় রাখবেন,

বাচ্চাকে ছোঁবার আগে ভালো করে হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগিয়ে নিন।

বাচ্চার জামাকাপড় ও ব্যবহার্য পরিষ্কার করার জন্য অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড ব্যবহার করুন।

নোংরা হাত, অসুস্থ ভ্রমণ সঙ্গী, ধুলোময়লা এবং ধোঁয়া থেকে ওকে আগলে রাখুন।

সাথে নিন সানস্ক্রিন এবং সান হ্যাট।

সাবধানতাঃ  আপনার শিশুর নিরাপত্তাই আপনার প্রধান উদ্বেগের কারণ। তাই শিশুর বেড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র গুছিয়ে নিন এবং পরিবহনের সময় নিরাপত্তার জন্য জরুরি সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে নিন। পর্যটন আধিকারিক সাথে কথা বলুন এবং ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করে রাখুন। কোনো টিকার প্রয়োজন আছে কিনা তা শিশু বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নিন।

অন্যান্য:  আপনার প্যাকিং লিস্টে আর যা, যা থাকা দরকার সেগুলো হলো ফার্স্ট এইড কিট, বাচ্চাদের সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, মুখ মোছার কাপড়, ব্রেস্ট পাম্প, ডায়াপার র‍্যাশ ক্রিম, ছাতা, খেলনা, প্যাসিফায়ার, বেবি স্ট্রোলার ইত্যাদি। 

এই লিস্ট যেনো শেষ হবার নয়। তবে এই সবকটা বিষয় মাথায় রাখতে পারলে আপনি নিশ্চিন্তে, কোনো সমস্যা ছাড়াই আনন্দ করে ঘুরতে পারবেন আপনার ক্ষুদে নয়নের মণির সাথে!

হ্যাপি ট্রাভেলিং, হ্যাপি প্যারেন্টিং! 

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে। চলে যেতে হবে আমাদের। চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *